Wednesday, 5 April 2017

পার্বত্য চট্রগ্রা‌মের সংঘ‌টিত হত্যাযঙ্গ

পার্বত্য চট্রগ্রা‌মের সংঘ‌টিত হয় অসংখ্য হত্যাযঙ্গ। আমরা কতটুকুই বা জানি?এইসব ঘটনার করুণ কিছু ইতিহাস নিচে তুলে ধরা হলঃ





১. বাংলা‌দে‌শের নাগ‌রিকগণ জানেন কি? পার্বত্য চট্রগ্রা‌মের ইতিহাসে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী আর সেটলার কতৃক সর্ব প্রথম গনহত্যা সংঘটিত হয়েছিলো কাউখালী বাজার কলমপতিতে রাঙামাটি জেলাতে। ২৫/৩/১৯৮০ সালে , সেখানে ৩০০ পাহাড়ি আদিবাসী ভাই বোনকে মিটিংএর নাম দিয়ে ডেকে এনে গুলি করা হয়েছিলো এবং ১০০০ এর অধিক পাহাড়ী আদিবাসী শরনার্থী হয়ে পাশ্ববর্তীদেশ ভার‌তের ত্রিপুরা রা‌জ্যের পালিয়ে যায় ঐ পা‌লি‌য়ে যাওয়া পাহা‌ড়ি অা‌দিবাসী‌দের জায়গা উপরে আজ বাঙালিরা দখল করে বসতবাড়ি গড়ে তুলেছে, আগুনে পুড়ে দেওয়া বৌদ্ধ বিহার আজ মসজিদ হয়ছে এই ঘটনার পূর্বপরিকল্পনা কারী সেনা কর্মকর্তারা সেই সময় প্রমোশন পেয়েছিলো।

২.বাংলাদেশের নাগরিকগণ জানেন কি? ২৬/৬/১৯৮১ সালে বানরাই পাড়া-বেলতলী ও বেলছড়িতে বাঙালি সেটেলারদের প্রত্যেক্ষ সেনা মদদে ৫০০ পাহাড়ি অা‌দিবাসী‌কে হত্যা ও গুম করেছিলো। এবং সাড়ে চার হাজার পাহাড়ি অা‌দিবাসী পাশ্ববর্তী‌দেশ ভারতে ত্রিপুরা রা‌জ্যেতে শরনার্থী হিসেবে চলে যেতে বাধ্য হয়েছিলো ঐ পাহা‌ড়ি অা‌দিবাসী অঞ্চলটি আজ সেটেলার বাঙা‌লি‌দের লোকালয় আর ‌নিরাপত্তা না‌মে তৈ‌রি করা হ‌য়ে‌ছিল সেনা ক্যাম্প।

৩. বাংলা‌দে‌শের নাগ‌রিকগণ জানেন কি? ১৯/৯/১৯৮১ সালে ৫০০ পাহা‌ড়ি অাদিবাসী ভাই বোনের রক্তের দাগ শুকানোর আগেই পৈশাচিক হিংস্রতায় সেনা এবং সেটেলার মিলিত বাহীনি তেলাফং-আসালং- গৌরাঙ্গ পাড়া- তবলছড়ি- বরনালা (ফেনীর নদীর কাছে) মোট ৩৫ টি পাহাড়ি অা‌দিবাসী গ্রাম আগুনে জ্বালিয়ে দেওয়া হ‌য়েছিলো। যে কার‌ণে ৯৫০ জ‌নের অ‌ধিক পাহা‌ড়ি অা‌দিবাসী নিহত ও অাহত হয়েছিলো। অগনিত পাহাড়ি অা‌দিবাসী ভারতের ত্রিপুরা রা‌জ্য‌রে শরনার্থী হ‌য়ে আশ্রয় নিয়েছিলো। বাংলাদেশ সরকার আজো সেই সব ঘটনা সম্পূর্ণ অস্বীকার করে এবং পরবর্তিতে ক্ষতিগ্রস্তদের প‌রিবার‌কে ত্রাণ দেয়া হয়েছিলো মাত্র ১৮ ডলার করে।

৪.বাংলা‌দে‌শের নাগ‌রিকগণ জানেন কি? ১৯৮৩ সালের জুন মাসের ২৬ তারিখ জুলাই মাসের ১১, ২৬ ও ২৭ তারিখ এবং আগষ্ট মাসের ৯, ১০ ,১১ তারিখ সেনা সেটেলার গং গোলকপতিমা ছড়া- মাইচ ছড়া – তারাবন ছড়ির পাহাড়ি অা‌দিবাসী‌দের গ্রাম গুলোতে অগ্নি সংযোগ লুটতরাজ হত্যা, ধর্ষণ, নারকীয়তা সৃষ্টি করেছিলো সেই সব ঘটনার নিহত হয়েছিলো ৮০০ অধিক পাহাড়ি আদিবাসী।

৫.বাংলা‌দে‌শের নাগ‌রিকগণ জানেন কি? ৩১/৫/১৯৮৪ সালের ভোরবেলায় ভুষণছড়ার পাহাড়ি আদিবাসীদের নেমে এসেছিলো ভহাভহা নরক। প্রথমে শান্তিবাহীনির সেনা ক্যাম্প আক্রমণের প্রতিশোধ হিসেবে বাঙালি সেটলার সেনা হায়েনার দল ৩০৫ নং সেনা ব্রিগেড, ২৬ নং বেঙ্গল রেজিমেন্ট ও বি ডি আরের ১৭ নং ব্যাটালিয়ন মিলে নিরস্ত্র পাহাড়ি গ্রাম ( হাটবাড়িয়া, সুগুরী পাড়া, তেরেঙ্গা ঘাট, ভূষণছড়া, গোরস্তান, ভূষণবাঘ, ইত্যাদি ) আগুনে জালিয়ে দিয়ে ছিলো । নিহত হয়েছিলো ৪০০ অধিক পাহাড়ি আদিবাসী নিহতদের মাঝে উল্লেখ যোগ্য সংখ্যক ছিলো শিশু ও নারী। অনেক পাহাড়ি আদিবাসী নারী সেনা কতৃক গন ধর্ষনের পর হত্যা করা হয়েছিলো আর ৭০০০ পাহাড়ি শরনার্থী হতে বাধ্য হয়েছিলো ভারতে।

৬.বাংলা‌দে‌শের নাগ‌রিকগণ কি ? ১/৫/১৯৮৬ সালে পানছড়িতে শান্তিবাহিনীর সদস্যরা বি ডি আর ক্যাম্প আক্রমণ করেছিলো । তার ফলশ্রুতিতে সেনা আর সেটলার নর পশুরা সেখানকার পাহাড়ি অা‌দিবাসী গ্রাম গুলোর মানুষ জন কে একটি মাঠে ডেকে জড়ো করা হয়েছিলো । তার পরে শুরু করা হয় তাদের উপর নির্যাতন লা‌টিচার্স ও গুলি। নিহত হয়েছিলো ১০০ অ‌ধিক পাহাড়ি অা‌দিবাসী ভাই ও বোন। অ্যমোনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এর নথিতে পাওয়া গি‌য়ে‌ছিল মিরিজবিল এলাকার এক ৭০ বছরের পাহাড়ি অা‌দিবাসী বৃদ্ধা কে পর্যন্ত হায়েনা গুলো রেহাই দেই নি।

৭.বাংলা‌দে‌শের নাগ‌রিকগণ জা‌নেন কি? পানছড়ির ঠিক একদিন পর ২/৫/ ১৯৮৬ সালে মাটিরাঙা তে পাহাড়ি শরনার্থীরা যারা ভারতে পালি‌য়ে যাচ্ছিলো, সেই নিরস্ত্র দেশত্যাগী মানুষের উপর এলোপাথারি ক‌রে গুলি চালিয়ে ছিলো বর্বর নরপশু সেনা কর্মকর্তরা এতে ৭২ জন পাহাড়ি অা‌দিবাসী বৃদ্ধ, শিশু ও নারী, নিহত হয়েছিলো।

৮.বাংলা‌দে‌শের নাগ‌রিকগণ জানেন কি? মে বাংলা‌দে‌শের নাগ‌রিকগণ দুই সপ্তাহ পার হতে না হতেই ১৮ ও ১৯/ ৫ মার্চ ১৯৮৬ সালে মাটিরাঙা থেকে প্রায় ২০০ জন ত্রিপুরা নারী পুরুষের দল যারা বে‌চে থাকার আশায় শিলছড়ি থেকে ভারতীয় সীমান্তের দিকে পার হচ্ছিলো কিন্তু বিধি বাম, তাইদং , কুমিল্লাটিলা গ্রামের মাঝামাঝি এক সরু পাহাড়ি পথ পাড়ি দেবার সময় বাংলাদেশ বি ডি আর এর ৩১ ব্যাটালিয়নের নর পশু জোয়ানরা তাদের উপর হামলা চালায় যার ফলে ১৬০ জন নিহত হয় , এমনকি বর্বর পশু জোয়ান বাহিনীর গুলির হাত থেকে বেচে যাওয়া আহতদের কে সেটেলার বাঙাল এনে বেয়নেট খুচিয়ে ও দা দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। ঐ ঘটনার বেচে যাওয়া অল্প কিছু সাক্ষী আজো ও জী‌বিত আছে।

৯.বাংলা‌দে‌শের নাগ‌রিকগণ জানেন কি? ৮, ৯, ১০ আগস্ট ১৯৮৮ সালে হিরাচর, শ্রাবটতলী, খাগড়াছড়ি, পাবলাখালী তে আনুমানিক ১০০ পাহাড়ি জুম্ম কে নির্মম ভাবে হত্যা ও গুম করা হয়। গণ ধর্ষণ করা হয় পাহাড়ি অ‌া‌দিবাসী নারীদের।

১০.বাংলা‌দে‌শের নাগ‌রিকগণ জা‌নেন কি? ৪/৫/১৯৮৯ সালে লংগদু তে তৎকালীন ইউ পি চেয়ারম্যান আবদুর রশিদ অজ্ঞাত নামা লোকের হাতে খুন হন এর দায় চাপানো হয় শান্তিবাহিনী সদস্যদের কাঁধে। এর জের ধরে সেনা সৃষ্ট ভিলেজ ডিফেন্স পার্টি নামক এক স্বসস্ত্র সেটলারদের দল সেনা মদদে অমানুষিক হত্যা যজ্ঞ নির্যাতন চালায়। এতে নিহত হয় ৪০ জন পাহা‌ড়ি অা‌দিবাসী নারী পুরুষ ও শিশু । তাদের মৃতদেহ পর্যন্ত ফেরত দেওয়া হয়নি, পুড়িয়ে দেয়া হয় বৌদ্ধ বিহার এমন কি তৎকালীন সাবেক চেয়ারম্যান অনিল বিকাশ চাকমা'র স্ত্রী, সন্তান ও নাতি কে পর্যন্ত নির্মম হত্যা যজ্ঞের শিকার হতে হয়। সেটলাররা আজো অনিল বিকাশ চাকমা'র সমস্ত জমি দখল করে রেখেছে।

১১.বাংলা‌দে‌শের নাগ‌রিকগণ জানেন কি ? ২/২/১৯৯২ সালে লোগাঙে এক দিনে জুম্ম জাতির বিরুদ্ধে অন্যতম বৃহৎ হত্যা যজ্ঞ চালানো হয় লোগাঙের গুচ্ছ গ্রামে। কাহীনির সুত্র পাতঃ এক পাহা‌ড়ি আদিবাসী মহিলা তার গাবাদি পশু চড়াতে গ্রামের অদূরে গিয়েছিলো। সেখানে দুই জন সেটেলার বাঙালি দ্বারা সে ধর্ষিত হয় এতে এক পাহাড়ি যুবক বাধা দি‌লে তখন তাকে সেখানেই হত্যা করা হয় এবং সেটলার বাঙা‌লিরা ও আহত হয়। আহত সেটলার বাঙা‌লি প্বার্শবর্তী ক্যাম্পে অভিযোগ করে যে শান্তিবাহিনীরা তাদের হত্যা করার চেষ্টা করেছে এর জের ধরে সেই একই হায়েনা সেনা সেটলার দল মিলে প্রায় ১৫০০ পাহাড়ি অ‌া‌দিবাসী জনসংখ্যা অধ্যুষিত গুচ্ছ গ্রাম গুলোতে হামলা চালায়। এতে প্রায় ৪০০ অ‌ধিক পাহাড়ি অা‌দিবাসী নিহত হয় ও ৮০০ পাহাড়ি অা‌দিবাসী বাড়ি ঘরে লুটপাট অগ্নিসংযোগ করা হয়, আশে পাশের গ্রামগুলো থেকে প্রায় ২০০০ হাজারের অ‌ধিক পাহাড়ি অা‌দিবাসীকে শরনার্থী হতে হয় প্বার্শবর্তী দেশ ভারতে।

১৩.বাংলা‌দে‌শের নাগ‌রিকগণ জানেন কি ?১৭/১১/১৯৯৩ সালে নানিয়াচর বাজারে পাহা‌ড়ি আদিবাসিদের শান্তিপূর্ণ র‍্যালিতে অতর্কিতে হামলা চালায় সেই একই জানোয়ার সেটলার বাহীনি এবং প্রত্যেক্ষ মদদ দাতা সেই একই সেনা হায়েনা এর নেতৃত্বে ছিলো সেটলারদের সংগঠন পার্বত্য গন পরিষদের নেতা মোঃ আয়ুব হোসাইন নামক হায়েনা এবং তৎকালীন বুড়িঘাট ইউপির চেয়ারম্যান নর পশু আব্দুল লতিফ। এতে নিহত হয় ২৯ জন পাহাড়ি আদিবাসী আহত হয় শতাধিক। এতে পাহাড়ি আদিবাসী ছাত্ররা যখন প্রতিরোধ গড়ে তোলার চেষ্টা করে তখন সেনা ক্যাম্প হতে পাহাড়ি আদিবাসী ছাত্রদের উপর উন্মুক্ত এলোপাথারি গুলি চালানো হয়।

এছাড়া পার্বত্য অঞ্চলে ছোট বড় আরো অনেক হত্যাযঙ্গ ধর্ষণ গুম সাম্প্রদায়ীক দাঙ্গা সংগঠিত হয়েছিল। প্বার্শবর্তীদেশ ভারতে শরনার্থী হতে হয়েছিল লক্ষাধিক। পাহাড়ি আদিবাসীদের মনে এক গভীর ক্ষতের মতো চিরকাল বহমান। আজ পর্যন্ত এর কোন সঠিক বিচার পাহাড়ি অা‌দিবাসী জনগন সুস্থ বিচার পায় নি।

No comments:

Post a Comment